রাজাদের কাহিনী সবসময়ই গ্রান্ড হয়, কিন্তু ১৯৪৭ সালের দেশবিভাগ সেইসব থেকে ইউনিক বলা চলে। মহাত্মা গান্ধীর শতচেষ্টা সত্তেও জিন্নাহ ও গান্ধীর শিষ্য নেহেরু এক চরম খেলায় মাতলেন যার মূল্য হলো বিশ্বের সর্বোচ্চ সং্খ্যক দেশান্তর ও ধর্মীয় দাঙ্গা। এটি আবার ঘটেছে ইংল্যন্ডের রাজার আ্যপয়েন্ট করা র্যাডক্লিফের ভারত -পাকিস্তান ভাগ করা যা তিনি মাত্র ১ সপ্তাহে করেছিলেন কোন সার্ভে ছাড়াই!! (রাজাদের কাহিনী আগেই তো বলেছি :-)) শুধু ধর্মীয় সং্খ্যাগুরু মুসলিম সেটা পাকিস্তান আর হিন্দু হলে ভারত। এই জন্য পাক থেকে ১১ হাজার মাইল দূরে হলেও বাংলা মুসলিম সং্খ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় পাকিস্তানের সাথে গেল একটা বিচ্ছিন্ন এলাকা হয়ে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পর আবার বাংলা ভাগ হলো আর অন্য সকল এলাকার মতো ঘটতে থাকল দেশান্তর!! আর পরিচালক সৃজিত এই সময়কে নিয়ে বানালেন সিনেমা রাজকাহিনী।
প্লটঃ বিশ্বের সভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া ইংরেজরা! তাদের ১৯০ বছরের শাসনের ইতি টানলেন ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ করে। র্যাডক্লিফের কলমের খোঁচায় ভাগ হবার পরে ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের সীমানা বুঝে নেয় আর শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা ও দেশান্তর। দেশবিভাগের সময় ভারত ও পূর্বপাকিস্তানের সীমানার মাঝখানের একটি বাড়ির কাহিনীই রাজকাহিনী। যেটি ছিলো একটি পতিতালয় যার উঠানের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে বর্ডার।
পতিলালয়ের কর্তা বেগমজানকে ১ মাসের সরকারী নোটিস দেওয়া হয় বাড়ি ছাড়তে। কিন্তু তিনি ও তার সাথে থাকা পতিতারা অস্বীকার করেন কেননা যেখানে ধর্ম, গোত্রের কোন ঠিক নেই সেখানে তারা ভাগ হবে কেন? কিন্তু তাদের হটানোর জন্য চলতে থাকে স্বরযন্ত্র, এক ফেরোশাস গুন্ডা কবীরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখন কী করবে সেই পতিতারা? সেখান থেকে কী চলে যাবে? যদি যেতে হয় কোথায় যাবে কেননা তাদের তো ধর্ম,জাত নেই। নাকি রুখে দাঁড়াবে?? এই নিয়েই রাজকাহিনী!
সৃজিত অসাধারণ কাজ করেছে। পতিতালয়ের কাহিনী কিন্তু সত্য। সিনেমার কাস্ট, ডায়ালগ ও মেকিং অসাধারণ। অনেকগুলা ডায়ালগ অর্থবহ ছিলো। যেমনঃ
নারীদের দুঃখের কথা বোঝাতে গিয়ে রুবিনা চরিত্রে অভিনয় করা জয়া আহসান পতিলালয়ের কর্মী সুজনের হাত তার বুকে নিয়ে বলেছিল, এটা কি? এটা ছাতি, মাংসপিন্ড যা দিয়ে মা তার সন্তানকে দুধ খাওয়ায় আর যৌনাঙ্গে হাত নিয়ে বলেছিল আর এটা কি জানিস? এটা হলো যোনি। আমাদের কপাল, নাক, কান ও গলার মতোই দেহের একটা অংশ। চামড়া, শুধু চামড়া। নানান রঙ্গের চামড়া।
অনেক সুশীলরা জয়ার এই দৃশ্য নিয়ে নানা ফতোয়া দিচ্ছে। সত্য কথার উপর কী কোন ফতোয়া চলে? শুধু এই চামড়ার অঙ্গ থাকার ফলে তাদের উপর কী পরিমাণ যন্ত্রণা দেওয়া হয় তা তো দেখায় যায়। উনারা গোপনে রগরগে মুভি দেখেন, দারুন সব চিন্তা ও সপ্ন দেখেন আর রাইতে নিজের অধিকার এই চামড়ার উপর ফলান কিন্তু সামান্য এই সত্য প্রকাশে উনাদের আপত্তি!! যাহা গোপন তাহাই ভাল তাই না!!?
এই সিনেমাতে প্রচুর সিম্বল লুকিয়ে আছে। একটার কথা বলি,সিনেমা চলাকালে দেখায় সীমানার কাঁটাতারের বেড়ার পাশে এক ছেলে মুত্র বিসর্জন করছে। অনেকে খেয়াল হয়তো করবে না কিন্তু আমার কাছে দারুন স্ট্রাইকিং মনে হয়েছে। ফিনিশিংটাও অনন্যসাধারণ উইথ ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক।
ওভারঅল, সৃজিতের সিনেমার মধ্যে চতুষ্কোণের পর রাজকাহিনী আমাকে যারপরনাই মুগ্ধ করেছে।সো তাড়াতাড়ি দেখে ফেলুন..

No comments:
Post a Comment